ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারে অস্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ ও ঝুঁকিসমূহ

এইচএসসি (বিএমটি) ভোকেশনাল - ডিজিটাল টেকনোলজি ইন বিজনেস-১ - NCTB BOOK

ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। একটানা এসব ডিভাইস ব্যবহার করা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। হাতের কব্জি, চোখ, মেরুদণ্ডসহ সারা শরীরেই এই ক্ষতি হতে পারে। আর মানসিক স্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়তে পারে এইসব ডিজিটাল ডিভাইসের অতি ব্যবহারে। যার প্রমাণ এখন সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাচ্ছি। সঠিক পদ্ধতিতে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারে আমরা যেমন উপকৃত হতে পারি, তেমনি এর ভুল ব্যবহার আমাদেরকে শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ করে তোলে।

Content added By

আইসিটি কর্মক্ষেত্রের অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্র ও বিষয়াবলি

যদি কোনো কর্মস্থলে ঝুঁকি কী এবং কোথায় অবস্থিত বা কীভাবে আসতে পারে ইত্যাদি জানা থাকে এবং ঐ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার বাস্তবভিত্তিক প্রতিকার জানা থাকে এবং যদি তা যথাসময়ে প্রয়োগ করা হয়, তবে দুর্ঘটনা সম্পূর্ণভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব। আইসিটি যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার জন্য নানা ধরণের প্রভাব ও কারণ কাজ করে। এ প্রভাবগুলোর কিছু প্রাকৃতিক, কিছু কৃত্রিম এবং কিছু ব্যবহারকারীর অদক্ষতা, অসাবধানতাজনিত। আইসিটি যন্ত্রপাতির ক্ষতিকারক নিয়ামকগুলো বৃহত্তর চারটি পরিসরে বিভক্ত করা যায়। যথা—

১. ভৌত ক্ষতিকারক নিয়ামকসমূহ।

২. বৈদ্যুতিক সমস্যাজনিত ক্ষতিকারক নিয়ামকসমূহ। 

৩. সফটওয়্যার সমস্যাজনিত ক্ষতিকারক নিয়ামকসমূহ ।

৪. ব্যবহারকারীর ভুল পরিচালনা।

১. ভৌত ক্ষতিকারক নিয়ামকসমূহ

যে সমস্ত ক্ষতিকারক নিয়ামকসমূহ বাহ্যিক অবস্থা ও পরিবেশগত কারণে আইসিটি যন্ত্রপাতির ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দেয়, তাদেরকে ভৌত ক্ষতিকারক নিয়ামক বলে । এগুলোর মধ্যে রয়েছে—

• ধুলাবালি ও ময়লা : বায়ুতে প্রচুর ধূলিকণা থাকে। যে কোন জিনিস এসব ধূলিকণা দ্বারা আক্রান্ত হয়। দুইটি বিশেষ কারণে কম্পিউটার ধূলাবালি দ্বারা আক্রান্ত হয়— তাপ এবং চুম্বক। 

▪️ধূলিকণার তাপের প্রতি সহজাত আকর্ষণ রয়েছে। সচল অবস্থায় কম্পিউটার কিছুটা গরম থাকে বলে এতে প্রচুর ধূলা জমে।

▪️অত্যধিক তাপমাত্রা : স্বাভাবিক এবং সহনীয় তাপমাত্রা কম্পিউটারের জন্য ক্ষতিকর নয়। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ চাহিদার কারণে পাওয়ার সাপ্লাই গরম হয়। এ অবস্থায় ইলেক্ট্রনিক সার্কিট নষ্ট হতে পারে বা সার্কিট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে কম্পিউটার বিকল হয়ে যেতে পারে।

▪️তরল পদার্থ ও আর্দ্রতা : আর্দ্রতা কম্পিউটারের কার্যক্ষমতার ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে। আর্দ্রতা খুব বেশি হলে কম্পিউটারের ভিতরে ব্যবহৃত চিপের পিনগুলোতে ময়লা ও ধূলাবালি জমে শর্ট সার্কিট হতে পারে।

• বিভিন্ন ধরনের নয়েজ : অনাকাঙ্ক্ষিত ভোল্টেজ, কারেন্ট, ডেটা এবং শব্দকে নয়েজ বলা হয়। নয়েজ প্রধানত তিন ধরনের- যথা : i) শাব্দিক নয়েজ, ii) কম্পিউটার ব্যবস্থার ক্ষতিকারক নয়েজ এবং iii) ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রাংশের নয়েজ।

২. বৈদ্যুতিক সমস্যাজনিত ক্ষতিকারক নিয়ামকসমূহ

যে সকল ক্ষতিকারক নিয়ামকসমূহ বিদ্যুতের অনাকাঙ্ক্ষিত তাৎক্ষণিক অবস্থার কারণে সৃষ্টি হয়, তাদেরকে বৈদ্যুতিক সমস্যাজনিত ক্ষতিকারক নিয়ামক বলে। বৈদ্যুতিক সমস্যাজনিত ক্ষতিকারক নিয়ামকগুলো হলো-

• স্পাইক ও সার্জ : হঠাৎ করে অত্যন্ত ক্ষুদ্র সময়ের জন্য বৈদ্যুতিক শক্তি বেড়ে যাওয়াকে স্পাইক (Spike) বলা হয়। বৈদ্যুতিক বিভবের (Voltage) ক্ষণস্থায়ী বেড়ে যাওয়াকে সার্জ বলা হয়। বর্তমানে এই স্পাইক ও সার্জ থেকে কম্পিউটারসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতিকে রক্ষা করার জন্য সার্জ প্রটেক্টর ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

ব্রাউনআউট : পরিকল্পিত বা অপরিকল্পিত কোন কারণে সরবরাহ ভোল্টেজ কমে যাওয়াকে, ব্রাউন আউট বলা হয়। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ চাহিদা মিটানোর অক্ষমতার কারণে এ ঘটনা ঘটে।

▪️ব্ল্যাকআউট : হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যাওয়াকে ব্ল্যাকআউট বলা হয়। ঝড়, সুইচিং সমস্যা ইত্যাদির কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে। ব্ল্যাকআউটের সময় র‍্যাম হতে তথ্য মুছে যায়। ব্লাকআউটের পর বিদ্যুৎ পুনরায় চালু হলেও সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে কম্পিউটার সচল করা উচিত।

▪️ট্রানসিয়েন্ট : বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন সৃষ্ট ভোল্টেজ বা কারেন্টের অপেক্ষাকৃত বড় ধরণের স্পাইককে ট্রানসিয়েন্ট বলা হয়। অনেক ট্রানসিয়েন্ট পাওয়ার সাপ্লাই দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে নিঃশেষ হয়। কিন্তু অনেক ট্রানসিয়েন্ট এ বাঁধা অতিক্রম করে কম্পিউটারের বর্তনীতে পৌঁছে। ফলে তথ্য মুছে যায় বা পরিবর্তিত হয়। আবার কখনও কখনও বর্তনী সম্পূর্ণ ভাবে বিকল হয়ে যায়।

▪️ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন বা ইএমআর (EMR): ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশনের ফলে অবাঞ্চিত দূষণ বা বিকিরিত রশ্মি কম্পিউটার এবং সংশ্লিষ্ট পণ্যের ক্ষতি সাধন করে। ইএমআর'কে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা— ক) নিম্ন কম্পাংকের ইএমআর এবং খ) উচ্চ কম্পাংকের ইএমআর ইএমআর নয়েজের কম্পাংক যদি ১ হার্টজ থেকে ১০ কিলোহার্টজের মধ্যে হয় বলে তাকে নিম্ন কম্পাংকের ইএমআর বা আরএফআই (রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ইন্টারফারেন্স) বলা হয়। আর ইএমআর নয়েজের কম্পাঙ্ক ১০ কিলোহার্টজের বেশি হলে তা উচ্চ কম্পাঙ্কের ইএমআর হিসেবে বিবেচিত।

জেনে রাখো:

ইলেকট্রোম্যাগনেটিক

রেডিয়েশন হলো মহাবিশ্বের অনেকগুলি শক্তির মধ্যে একটা। ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন একটি ত্বরিত বৈদ্যুতিক চার্জ সংশ্লিষ্ট বৈদ্যুতিক এবং চৌম্বক ক্ষেত্র থেকে উৎপন্ন। এটি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ ধারণ করে, যা ইলেকট্রিক এবং চুম্বকীয় ক্ষেত্রের মাধ্যমে আলোর গতিতে ছড়িয়ে পড়ে। এটি রেডিও তরঙ্গ, মাইক্রোওয়েভ, ইনফ্রারেড, দৃশ্যমান। আলো, অতিবেগুনী, এক্স-রে, এবং গামা রশ্মি অন্তর্ভুক্ত।

▪️ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ইন্টারফারেন্স বা ইএমআই

(EMI) : ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ইন্টারফারেন্স বা ইএমআই কম্পিউটারের ক্ষতি করতে পারে। বিভিন্ন উৎস থেকে ইএমআই নয়েজ সৃষ্টি হতে পারে। যেমন— ক. কলকারখানায় ব্যবহৃত যন্ত্র, খ. চিকিৎসা সরঞ্জামাদি, গ. গবেষণা যন্ত্র, ঘ. ইলেকট্রিক মোটর, ঙ. ড্রিল মেশিন এবং চ. করাত কল ইত্যাদি।

🚻 শ্রেণির কাজ : নিচের ছকে কর্মক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক সমস্যাজনিত ক্ষতিকারক নিয়ামকসমূহের একটি তালিকা আছে। এসব নিয়ামক দ্বারা সৃষ্ট সমস্যাগুলো লিখো ।

নিয়ামকসমূহসৃষ্ট সমস্যা
স্পাইক ও সার্জ 
ব্ল্যাক আউট 
ব্রাটন আউট 
ইএমআর 

এছাড়া কম্পিউটার বর্তনীর খারাপ সোলডারিং, ঢিলা সংযোগ ইত্যাদির কারণেও ইএমআই উৎপন্ন হতে পারে। ইএমআই মূলত তিন প্রকার। যথা— ক. ট্রানসিয়েন্ট ইএমআই, খ. ইন্টারন্যাল ইএমআই এবং গ. ইলেকট্রোস্ট্যাটিক ডিসচার্জ ।

▪️ইলেকট্রোস্ট্যাটিক ডিসচার্জ বা ইএসডি (ESD): স্বল্প সময় স্থায়ী ইলেক্ট্রিক্যাল ডিস্টারবেন্সকে গ্লিচ বলা হয়। গ্লিচের স্থায়িত্ব কোন কোন ডিজিটাল সার্কিটের ক্ষতি সাধনের জন্য যথেষ্ট। মূলত ইলেকট্রোস্ট্যাটিক ডিসচার্জ বা ইএসডি (ESD) এর ফলে গ্লিচ সৃষ্টি হয়। ইলেকট্রোস্ট্যাটিক ডিসচার্জ গ্লিচের কয়েকটি উৎস হলো— ক. অতি উত্তপ্ত যন্ত্রাংশ, খ. যথাযথ গ্রাইন্ডিং না থাকা, গ. কেবলের খারাপ শিল্ডিং, ঘ. খারাপ কালাই সংযোগ এবং ঙ. কম আর্দ্রতা ইত্যাদি।

৩. সফটওয়্যার সমস্যাজনিত ক্ষতিকারক নিয়ামকসমূহ : ব্যবহৃত সফটওয়্যার এর কারণে কম্পিউটারে যে ক্ষতিসমূহ পরিলক্ষিত হয়, তাদের সফটওয়্যার সমস্যাজনিত ক্ষতিকারক নিয়ামক বলে। সফটওয়্যার সমস্যাজনিত ক্ষতিকারক নিয়ামক হলো—

ক. অপারেটিং পদ্ধতি নষ্ট হয়ে যাওয়া, খ. ভাইরাসে আক্রমণ, গ. সফটওয়্যার বা তথ্য ভান্ডারে অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যবহারকারীর অনুপ্রবেশ বা হ্যাকিং এবং তথ্য চুরি ।

৪. ব্যবহারকারীর ভুল পরিচালনা : যথাযথ নিয়ম অনুসরণ না করে কম্পিউটার সংস্থাপন, চালনা, রক্ষণাবেক্ষণ বা যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপনের কারণে যে ক্ষতি হয় তাকে, ভুল পরিচালনাজনিত নিয়ামক বলে। ভুল পরিচালনাজনিত ক্ষতিকারক নিয়ামকগুলো হলো— ক. হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার সঠিক না হওয়া, খ. যন্ত্রাংশের প্রতিস্থাপন সঠিক না হওয়া, গ. যথাযথ নিয়মে না চালানো এবং ঘ. যথাযথ রক্ষণাবেক্ষনের অভাব।

Content added || updated By

সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব ও স্বাস্থ্যঝুঁকি

সমাজ জীবনে আইসিটির ইতিবাচক প্রভাবে পাশাপাশি কিছু নেতিবাচক প্রভাবও লক্ষ করা যায়। দিন দিন অনলাইন যোগাযোগ ব্যবস্থার জনপ্রিয়তার কারণে মানুষ সামনা সামনি আলোচনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। ফলে মানুষ অনেক বেশি আত্মকেন্দ্রিক ও অন্তর্মুখী হয়ে যাচ্ছে এবং হ্যাকিং, পর্ণোগ্রাফি, অনলাইন গ্যাম্বলিং ইত্যাদি অনৈতিক কর্মকান্ডে আসক্ত হচ্ছে। এভাবে আইসিটি মানুষের নৈতিক অবক্ষয়ের একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্মক্ষেত্রে আইসিটি যেমন কারও জন্য আশীর্বাদ, তেমনি কারও জন্য অভিশাপ। কারণ কম্পিউটার ও বিভিন্ন আইসিটি পণ্য কর্মক্ষেত্রে মানুষের স্থান দখল করে নিচ্ছে বলে অনেক মানুষ তাদের চাকরি হারাচ্ছে। তবে উৎপাদনশীলতা

জেনে রাখো :

সামাজিক নেটওয়ার্কের জন্যই ইন্টারনেটের ব্যবহার বেশি। বাংলাদেশের যে কোন স্থান থেকেই এখন লোকেরা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পাবেন। প্রায় ৯৫ শতাংশ মানুষ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। অপরদিকে, ব্রডব্যান্ড লাইনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন প্রায় তিন শতাংশ মানুষ। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের একটি বড় অংশ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবেই ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন। তবে, গত কয়েক বছর ধরে ইন্টারনেট ব্যবহার করে নতুন ধরনের ব্যবসা বানিজ্য শুরু হয়েছে দেশে, যার একটি অংশ ইন্টারনেটে নানা ধরনের পণ্য কেনাবেচা করছেন।

বৃদ্ধির জন্যে এই জনশক্তিকে বিকল্প খাতে নিয়োগ করতে হচ্ছে। আইসিটি সেক্টরসহ ডিজিটাল সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের কারণে মানুষ যেসব আসক্তিতে ভুগছে তা নিম্নরূপ— 

১. কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহারে আসক্তি

বর্তমানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাথে আসক্তির মতো ভয়ংকর একটা নেতিবাচক শব্দ ব্যবহৃত হচ্ছে। যাদের কম্পিউটারে ইন্টারনেটের যোগাযোগ আছে তাদের কারো কারো হয়ত ফেসবুক একাউন্ট আছে। সেই ফেসবুকে সম্ভবত নিজের সম্পর্কে কোনো তথ্য দিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে কখন সেখানে কেউ লাইক দিবে। ফেসবুকে বন্ধু বাড়লে হয়তো অনেকে আনন্দ পায় এবং ঠিক কম্পিউটার গেমের মতোই ফেসবুক নামে সামাজিক নেটওয়ার্কে যতটুকু সময় দেওয়া উচিত, কেউ কেউ নিশ্চয়ই তার থেকে অনেক বেশি সময় দিয়ে ফেলে। 

চিত্র : ফেসবুক আসক্তি

তারা হয়তো জানে কাজটি করা ঠিক হচ্ছে না তারপরও সেই কাজটি না করে থাকতে পারে না। এই না পারার নামই হলো আসক্তি। মাদকের জন্যে এটি যেমন হতে পারে ঠিক সেরকম কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে। মাদক জীবনের জন্য যে রকম ক্ষতিকর, অতিরিক্ত কম্পিউটার, ইন্টারনেট তথা কম্পিউটার গেম ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহারও ক্ষতির কারণ হতে পারে।

২. কম্পিউটার গেমে আসক্তি

কম্পিউটার প্রযুক্তি সম্পর্কে অনেক সময়ই অভিভাবকরা ধরে নেন, এটা দিয়ে যা কিছু করা হয় সেটাই বুঝি ভালো। ফলে তাদের সন্তানেরা দীর্ঘ সময় কম্পিউটারের সামনে বসে কম্পিউটার গেম খেলে কিংবা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে। তখন তারা বুঝতে পারেন না তাদের সতর্ক হওয়ার ব্যাপার রয়েছে। কম্পিউটার গেম এমনই এক ধরনের বিনোদন যাতে একটি ছোট শিশু থেকে পূর্ণ বয়স্ক মানুষ পর্যন্ত সবাই আসক্ত হয়ে যেতে পারে। 

চিত্র: কম্পিউটার গেম আসক্তি

কোরিয়ার একজন মানুষ টানা পঞ্চাশ ঘন্টা কম্পিউটার গেম খেলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিল। চীনের এক দম্পতি কম্পিউটার গেম খেলার অর্থ জোগাড় করতে তাদের শিশু সন্তানকে বিক্রয় করে দিয়েছিল। এই উদাহরণগুলো থেকে বোঝা যায় যে, কোনো মানুষের পক্ষে কম্পিউটার গেমে আসক্ত হয়ে যাওয়া মোটেও বিচিত্র কিছু নয় এবং একটু সতর্ক না থাকলে একজন খুব সহজেই আসক্ত হয়ে যেতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো একটা কম্পিউটার গেমে তীব্রভাবে আসক্ত একজন মানুষের মস্তিষ্কে বিশেষ উত্তেজক রাসায়নিক দ্রব্যের আবির্ভাব হয়। যারা সপ্তাহে অন্তত ছয়দিন টানা দশ ঘন্টা করে কম্পিউটার ব্যবহার করে তাদের মস্তিষ্কের গঠনেও এক ধরনের পরিবর্তন হয়ে যায়। কাজেই কম্পিউটার গেমে আসক্ত হওয়ার পরিণতি মোটেও ভালো নয় ।

🚻 শ্রেণির কাজ : তুমি কি কম্পিউটার গেমে আসক্ত?

তুমি কি কম্পিউটার গেমে আসক্ত?
▫️হ্যাঁ▫️না

যদি উত্তর হ্যাঁ হয় তবে এর থেকে প্রতিকারের জন্য তোমার কী করা উচিৎ বলে তুমি মনে করো ।

৩. সামাজিক নেটওয়ার্ক আসক্তি

ইন্টারনেটে সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হলো এক ধরনের ওয়েবসাইট। যেখানে বন্ধুত্ব তৈরির পাশাপাশি, বার্তা বা বিভিন্ন সংবাদ আদান-প্রদান, অডিও-ভিডিও ইত্যাদি আপলোড বা ডাউনলোড করা যায়। আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে পরিচিত মানুষের সাথে বিশেষভাবে যোগাযোগের জন্য বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ওয়েবসাইট। যেমন- ফেসবুক, টুইটার, অরকুট, স্কাইপি, ফ্লিকার, মাইস্পেস, ডিগ, ইউটিউব, ডায়াসপোরা ইত্যাদি ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমান সময়ে বিনোদন, যোগাযোগ, বন্ধু সৃষ্টি ও সংবাদ প্রচার ইত্যাদিতে সামাজিক ওয়েব সাইটের ব্যবহার এক রকম অপরিহার্য হয়ে গিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, সামাজিক যোগাযোগ সাইটে আসক্তি ধীরে ধীরে সারা পৃথিবীর জন্যেই একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে এই সাইটগুলোর সাফল্য নির্ভর করে সেগুলো কত দক্ষতার সাথে যে কাউকে আসক্ত করতে পারে তার উপর। পুরো কর্মপদ্ধতির মাঝেই যে বিষয়টি রয়েছে, সেটি হচ্ছে কত বেশি বার এবং কত বেশি সময় একজনকে এই সাইটগুলোতে টেনে আনা যায় এবং তাদেরকে দিয়ে কোনো একটা কিছু করানো যায়। কাজেই কেউ যদি অত্যন্ত সতর্ক না থাকে, তাহলে তার এই সাইটগুলোতে পুরোপুরি আসক্ত হয়ে যাবার খুব বড় একটা সম্ভাবনা রয়েছে। জেনে হোক না জেনে হোক ব্যবহারকারীরা নিজের সম্পর্কে অত্যন্ত তুচ্ছ খুঁটিনাটি তথ্য সবার সামনে উপস্থাপন করে এবং প্রত্যাশা করে কেউ সেটি দেখলে সে খুশি হবে; আর কেউ পছন্দ করলে ব্যবহারকারী আরো বেশি খুশি হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি অনেকটা মাদকের মতো কাজ করে এবং ব্যবহারকারী ঘন্টার পর ঘন্টা তাদের মূল্যবান সময় অপচয় করতে দ্বিধাবোধ করে না।

🔳 ফেসবুক ও টুইটারের মধ্যে পার্থক্য কি?

▪️ফেসবুক একটি সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট, যা একজন ব্যক্তিকে একটি বৃহৎ গ্রুপের সাথে সংযুক্ত করে। টুইটার একটি অনলাইন ওয়েবসাইট, যা নিবন্ধিত ব্যবহারকারীদের ছোট বার্তা অর্থাৎ টুইটগুলি পড়তে ও সম্প্রচারের অনুমতি দেয়।

▪️ফেসবুকে একজন ব্যবহারকারী চ্যাট করতে, ছবি আপলোড করতে, ভিডিও বা লিঙ্ক শেয়ার করতে, কল করতে (ভয়েস এবং ভিডিও), পোস্ট করতে এবং স্ট্যাটাস দিতে পারে। তবে টুইটারটি মাইক্রোব্লগিং বৈশিষ্ট্যের জন্য জনপ্রিয়।

▪️ফেসবুক ২০০৪ সালে চালু হয়েছিল, যেখানে টুইটার ২০০৬ সালে তৈরি হয়েছিল। ফেসবুকে বাস্তব জীবনের বন্ধুদের সাথে বা অপরিচিতদের সাথে ভার্চুয়্যালি বন্ধুত্ব করা যায়। টুইটারের ক্ষেত্রে, ব্যবহারকারী কেবল অনুসরণ করে।

▪️ফেসবুক তাৎক্ষণিক বার্তা প্রেরণে সক্ষম, তবে টুইটার তা করে না।

▪️ফেসবুকে যেকোনো দৈর্ঘ্যের স্ট্যাটাস পোস্ট করা যায়। টুইটারে ১৪০টির বেশি অক্ষরের পোস্ট দেয়া যায় না।

এইসব আসক্তির কারণে সমাজে যেসব সমস্যা তৈরি হচ্ছে তা নিম্নরূপ—

▪️অশ্লীলতা : ইন্টারনেটে অনেক অশ্লীল এবং নগ্ন প্রচারণায় মানুষের নৈতিক চরিত্রের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে । বিশেষ করে শিশু ও কিশোরদের বিপথগামী হওয়ার সম্ভাবনা ক্রমেই বাড়ছে। 

▪️গোপনীয়তা: তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের ফলে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা অনেকক্ষেত্রে প্রকাশিত হয়ে যাচ্ছে, যা মোটেই কাম্য নয়। 

▪️ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব : তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে সর্বত্রই অটোমেশনের ছোঁয়া লেগেছে। ফলে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে প্রতিনিয়তই বেকারত্ব বাড়ছে।

▪️শারীরিক সমস্যা : তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ডিভাইসসমূহ বিভিন্ন প্রকার স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য দায়ী, যেমন— চোখের উপর চাপ, কব্জির ক্ষতি, পিঠের সমস্যা, মানসিক চাপজনিত সমস্যা প্রভৃতি।

▪️অপসংস্কৃতি ও মিথ্যাচার : তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিকাশের ফলে অপসংস্কৃতি, মিথ্যা প্রচারণা ইত্যাদি মানুষের জীবনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করছে। বিশেষ করে ভিনদেশী সংস্কৃতির আগ্রাসনের ফলে দেশি সংস্কৃতি হারাতে চলেছে। বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ব্লগ সাইট, ফেসবুক, টুইটার ব্যবহার করে কারো ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি, সংবাদ এডিট করে, মিথ্যা ছবি বা তথ্য প্রকাশ করে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে জাতিগত দাঙ্গা-ফ্যাসাদ তৈরি হচ্ছে।

▪️অপরাধ প্রবণতা: সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্তির ফলে তরুণ সমাজের মধ্যে আচার-আচরণ, পোষাক পরিচ্ছেদ, মানসিকতা, শ্রদ্ধাবোধ প্রভৃতি বিষয়ে উদ্বেগজনক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। যা তাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা তৈরি করে।

▪️সামাজিক সমস্যা : ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদির ব্যবহারের ফলে বিবাহ-বিচ্ছেদের মতো ঘটনাও ঘটছে। শিশু-কিশোররা ভায়োলেন্স গেইম খেলার প্রভাবে এবং অশ্লীতার কারণে সামাজিক অপরাধ ক্রমেই বাড়ছে, যা বর্তমান সময়ের একটি বড় সমস্যা।

▪️বুদ্ধিমত্তার ক্ষতিগ্রস্ততা : তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের ফলে মৌলিক গবেষণা থেকে মানুষ দূরে থাকবে। এ প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে প্রায় সব ধরনের সমস্যার সমাধান সহজে পাওয়ার কারণে চিন্তা ও গবেষণার মাধ্যমে নতুন কিছু আবিষ্কার হতে দূরে থাকবে। ফলে আমাদের সমাজ ও জাতি মেধাবী প্রজন্ম হতে বঞ্চিত হবে।

Content added || updated By

স্বাস্থ্যসম্মত আইসিটি কর্মপরিবেশ (Healthy Work Environment of ICT )

স্বাস্থসম্মত আইসিটি কর্মপরিবেশের জন্য প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট ভৌত পরিবেশ এবং কিছু সতর্কতা, যা নিচে আলোচনা করা হলো।

নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত কাজের পরিবেশ

▪️কাজের স্থান নির্ধারণ : কাজের স্থানে কম্পিউটার যন্ত্রপাতির ব্যবহার সম্পর্কিত স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা আইনে আসবাবপত্র ও যন্ত্রপাতি সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকতে হবে। নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয় করার সময় এবং ICT পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে নিয়োগ কর্তাকে অবশ্যই বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে।

▪️আলো : রুম যথেষ্ট আলোকিত হতে হবে। তবে কম্পিউটারের মুখোমুখি বা পিছনে জানালা থাকা যাবে না, যাতে আলো পড়ে। কাজের স্থানে এমনভাবে আলোকিত করতে হবে, যাতে কম্পিউটার স্ক্রিন হতে প্রতিফলিত আলো চোখের পীড়ন সৃষ্টি করতে না পারে। সেক্ষেত্রে জানালার পর্দা বা ব্লাইন্ড ব্যবহার করতে হবে।

আসবাবপত্র : চেয়ার, টেবিল এবং কম্পিউটারের সাথে সংশ্লিষ্ট আসবাবপত্র আরামদায়ক ও শোভনীয় হতে হবে। উচ্চতা সমন্বয় করা যায় এরূপ চেয়ার সরবরাহ করতে হবে এবং ডেস্ক ও কী-বোর্ড হতে সঠিক উচ্চতা এবং দূরত্বে স্থাপন করতে হবে।

▪️শব্দ : কাজের স্থান নিরেট হতে হবে এবং শব্দ উৎপাদনকারী ডিভাইস, যেমন- ডট-ম্যাট্রিক্স প্রিন্টার অ্যাকাইসটিক কাভার দ্বারা সংযুক্ত করতে হবে অথবা পৃথক রুমে রাখতে হবে, যাতে শব্দদূষণ না হয় ৷

• হার্ডওয়্যার : স্বাস্থ্যসম্মত হার্ডওয়্যার ব্যবহার করতে হবে, যেমন- লো রেডিয়েশন মনিটর ব্যবহার। স্ক্রিন কম্পমান হওয়া যাবে না এবং ঢালু ও আংটাযুক্ত হতে হবে। কী-বোর্ড পৃথক পরিবর্তনশীল এবং কাজের সহায়ক হতে হবে।

সফটওয়্যার : কর্তৃপক্ষকে এমন সফটওয়্যার নির্বাচন করতে হবে যাতে, ব্যবহারকারীরা সহজে ব্যবহার করতে পারে এবং স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। কর্মচারী যাতে সহজে কাজ করতে পারে এজন্য নিয়োগকর্তার প্রয়োজন মতো সফটওয়্যার বাছাই করতে হবে। এটি ব্যবহার করা অবশ্যই সহজ হতে হবে।

▪️কাজের পরিবেশ : কাজের স্থানে বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং আরামদায়ক তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার ব্যবস্থা রাখতে হবে। নিচের চিত্রে একটি সুপরিকল্পিত কম্পিউটারের কাজের স্থানের বৈশিষ্ট্য দেখানো হয়েছে।

📝 জেনে রাখো

আইসিটি কর্মপরিবেশের অন্যতম অংশ হলো একটি সুপরিকল্পিত কম্পিউটার ওয়ার্কস্টেশন।

হাত ও কব্জির সুরক্ষা

হাত ও কব্জির সুরক্ষার জন্য কতকগুলো ব্যায়াম করা উচিত। নিচে সেগুলো বর্ণনা করা হলো—

হাতের ব্যায়াম : অ্যাথলেটরা খেলার আগে যেভাবে নিজের প্রস্তুতি ঠিক করে, সেভাবেই কী-বোর্ড ব্যবহারের পূর্বে সবার উচিত হাতের একটু ব্যায়াম করে নেওয়া। বিভিন্ন রকমের হাতের ব্যায়াম রয়েছে। প্রথমে খুব হালকাভাবে হাত মেসেজ করতে হবে, কনুই থেকে হাতের কব্জি পর্যন্ত হাতের তালু দিয়ে উপর থেকে নিচে বা নিচ থেকে উপরের দিকে চাপ দিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে কর্মক্ষেত্রে হাতের ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে একটি বিরতি নিয়ে নিতে হয়।

চিত্র : হাত ও কব্জির ব্যায়াম

🚻 দলগত কাজ : শ্রেণি কক্ষে দলগতভাবে ভাগ হয়ে, হাত ও কব্জির ব্যায়ামগুরো করো। ঠিক মতো অনুশীলনের জন্য এক গ্রুপ অন্য গ্রুপকে সাহায্য করো।

কব্জির অবস্থান : কব্জি বা কনুইয়ের ব্যথা এড়িয়ে চলার জন্য টাইপ করার সময় কব্জি ও হাত সোজাসুজিভাবে রাখতে হবে। কী-বোর্ডকে ডেস্কের উপর রেখে এটিকে নিচু টেবিলে বা কী-বোর্ড ড্রয়ারের মধ্যে রাখতে হবে। না হলে কব্জির নার্ভগুলো কোষের বিরুদ্ধে ঘর্ষণ শুরু করবে ফলে RST pain অনুভব হবে।

 

স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে কম্পিউটার ব্যবহারের নিয়মাবলি

স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে কম্পিউটার ব্যবহার করার জন্য ব্যবহারকারীর আসন ব্যবস্থা ও শরীরের বিভিন্ন অংশের অবস্থান যথাযথ নিয়মে হওয়া উচিত। এর ফলে ব্যবহারকারী স্বাচ্ছন্দ্যে কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারবে এবং অতিরিক্ত কম্পিউটার ব্যবহার করার ফলে সৃষ্ট রোগের ঝুঁকি কমে যাবে। স্বাস্থ্যসম্মত ও সঠিকভাবে কম্পিউটার ব্যবহারের কয়েকটি নিয়ম নিম্নে দেয়া হলো।

মাথা : কম্পিউটারে কাজ করার সময় মাথাকে সোজাসুজিভাবে রাখতে হবে। এসময় স্ক্রিন থেকে হাতের দূরত্ব অনুযায়ী মাথা সামনে বা পিছনে নেওয়া যাবে না।

গলা : গলাকে রিল্যাক্সড ও বিস্তৃতভাবে রাখতে হবে।

ঘাড় : ঘাড়কে নিচে করে রাখতে হবে এবং সোজাসুজি বসতে হবে।

পেছন : পিঠকে কোমর থেকে সামান্য সামনে আনতে হবে। পিঠের নিচের অংশ স্বাভাবিকভাবে একটু বাঁকা করে রাখতে হবে।

কনুই : কনুইকে সঠিক কোণে (Angle) রিল্যাক্সড ভাবে রাখতে হবে।

কব্জি : কব্জিকে নিরপেক্ষ ও শিথিলভাবে রাখতে হবে। এটিকে বেশি উপরে বা নিচে নেওয়া যাবে না। হাঁটু : হাঁটুকে কোমরের তুলনায় একটু নিচে রাখতে হবে।

চেয়ার : হাঁটুকে একটি সুবিধাজনক অবস্থানে রাখার জন্য চেয়ারকে সামনের দিকে একটু ঢালুভাবে রাখতে হবে।

• লাইটের উৎস: আলো মাথার পেছন দিক থেকে আসতে হবে। 

স্ক্রিন: স্ক্রিনকে চোখের লেভেলে বা তার চেয়ে একটু নিচে রাখতে হবে। Anti-glare স্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। 

আঙ্গুল : আঙ্গুলকে স্বাভাবিকভাবে একটু বাঁকা করে রাখতে হবে।

কী-বোর্ড : কী-বোর্ডকে পুরোপুরি flat করে রাখতে পারলে বা কনুইয়ের লেভেলে রাখতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। কম্পিউটারের যে-সব কী ধরার জন্য পুরো হাতকে নাড়তে হয় সে সব কী-বোর্ড কে শুধুমাত্র আঙ্গুল বা কব্জির ঘুরিয়ে না ধরাই ভালো। একটু পর পর বিরতি নিতে হবে।

পা : পা ফ্লোরের উপর সোজাভাবে রাখতে হবে। খাটো লোকদের foot rest নিতে হতে পারে।

Content added || updated By

অরগানমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও অরগানমিক স্বাস্থ্যবিধি

প্রত্যহ দীর্ঘদিন কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করলে আমাদের শরীরে কিছু অঙ্গের উপর অত্যধিক চাপ এবং কম্পিউটার থেকে নিঃসৃত ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রশ্মি আমাদের বিভিন্ন ক্ষতি করতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে কম্পিউটার ব্যবহারের ফলে চোখ এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে যে ধরনের যন্ত্রণা এবং অসুবিধা সৃষ্টি হয়,দীর্ঘদিনের গবেষণার পর বিজ্ঞানীরা তা প্রতিরোধ ও নিরাময়ের পথ খুঁজে বের করেছেন। বিজ্ঞানের যে শাখায় এসব শারীরিক অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে বলা হয় অরগানমিকস (Ergonomics)। বিভিন্ন পেশার পেশাজীবীদের কর্মজীবনকে আরও স্বাচ্ছন্দ্যময় করার জন্যই বিজ্ঞানের এ শাখার উদ্ভব।

দ্রুত গতিতে টাইপ এবং মাউসে ঘন ঘন ক্লিক করে কম্পিউটারে কাজ করতে হয়। কম্পিউটারে কাজ করতে গিয়ে শরীরের পেশী এবং অস্থিসন্ধিকে একই পদ্ধতিতে বারবার চালনা করতে হয়। বারবার একই অঙ্গ প্রত্যঙ্গ চালনার বেশ কিছু কুফল বা শারীরিক সমস্যা আছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই কুফল বা সমস্যাকে “রিপিটেটিভ স্ট্রেন ইনজুরি” বলা হয়। সমাজে কম্পিউটার প্রফেশনালরা এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। কম্পিউটার ব্যবহারজনিত কারণে যে সব সমস্যা হতে পারে তা নিম্নে দেওয়া হলো।

১. মাথা ব্যথা।

২. চোখ ব্যথা ।

৩. ঘাড় এবং কাঁধ ব্যথা ।

৪. হাত, কনুই এবং কব্জি ব্যথা ।

৫. পিঠ, কোমর এবং পা ব্যথা ।

৬. হাঁটু, গোড়ালি এবং পায়ের পাতা ব্যথা।

উপরোক্ত সমস্যা সমূহ কী কী কারণে সৃষ্টি হয় তা নিম্নে দেওয়া হলো—

১. মাথা (Head) ব্যথা

• মনিটরের আকৃতি খুব ছোট হওয়া।

• মনিটরের কন্ট্রাস্ট নিম্নমানের বা রিফ্রেশ রেট কম হওয়া।

• মনিটর ব্যবহারকারীর খুব কাছাকাছি স্থাপন করা । 

• মনিটরে আলো বা অন্য কোন কিছুর প্রতিফলন হওয়া ।

• কক্ষের আলো খুব কম বা বেশি হওয়া।

• ফন্ট সাইজ খুব ছোট হওয়া।

২. চোখ (eye) ব্যথা

• মনিটরের খুব কাছে ব্যবহারকারীর আসন স্থাপন করা।

• দীর্ঘক্ষণ ধরে কাজ করা।

• মনিটর blinking করা।

• চশমা বা কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারকারী চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিরেকেই কম্পিউটার ব্যবহার করা।

• কক্ষের আলো খুব কম বা বেশি হওয়া।

• মনিটরের কন্ট্রাস্ট নিম্নমানের (poor contrast) বা রিফ্রেশ রেট (refresh rate) কম হওয়া ।

৩. ঘাড় এবং কাঁধ (Neck & Shoulders) ব্যথা

• সঠিক উচ্চতায় মনিটর স্থাপন না করা।

• ব্যবহারকারীর আসন কম্পিউটার থেকে দূরে হওয়া। • কী-বোর্ডের তুলনায় মাউস অধিক উচ্চতায় রাখা ।

• সামনের দিকে ঝুঁকে (Leaning forward) কাজ করা ।

• মাথা কাত করে বা পিছনে হেলান দিয়ে (Tilting back) কাজ করা।

• সঠিক অঙ্গস্থিতি (posture) অর্থাৎ ব্যবহারকারীর স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ আসন বিন্যাস ।

ঘাড়ে এবং কানের কাছে টেলিফোন ধরা অবস্থায় কম্পিউটারে কাজ করা। কী-বোর্ডের অবস্থান অধিক দূরে হওয়া কিংবা অধিক নিচে বা উচ্চতায় স্থাপন করা।

টেলিফোন সেট বা ব্যবহার্য অন্যান্য যন্ত্রপাতি হাতের নাগালের বাহিরে স্থাপন করা। দূরদৃষ্টি ও ক্ষীণদৃষ্টি উভয়ের জন্য ব্যবহৃত চশমা (bifocal) ব্যবহার করে কাজ করা।

• ডকুমেন্ট নিচে রেখে টাইপ করা। অর্থাৎ, টাইপ করার সময় বারবার নিচের দিকে তাকানো।

৪. হাত কনুই এবং কব্জি (Hand, Elbows & Wrists) ব্যথা

কী-বোর্ড অধিক দূরে কিংবা অধিক নিচে বা উচ্চতায় স্থাপন করা। কী-বোর্ড সরাসরি ব্যবহারকারীর সামনে না রেখে একপাশে রাখা বা এক পাশ থেকে কাজ করা।

কী-বোর্ডের তুলনায় মাউস অধিক উচ্চতায় রাখা।

কনুইতে ভার (leaning on elbows) দিকে কাজ করা। মাউস, কী-বোর্ড, ক্যালকুলেটর ইত্যাদি বেশি ব্যবহার করা।

• কজি সঠিক অবস্থানে না থাকা অর্থাৎ উপরে, নিচে কিংবা একপাশে থাকা।

• মাউস সেট-আপ ঠিক না থাকা। অর্থাৎ বামহাতি ব্যবহারকারী ডানহাতের মাউস (right-hand mouse) ব্যবহার করা।

• শরীর থেকে হাতের কনুই অধিক দূরত্বে রাখা ।

• শক্ত বাটনবিশিষ্ট কী-বোর্ড, পয়েন্টিং ডিভাইস বা লাইট পেন ব্যবহার করা কিংবা বিরতিহীনভাবে কম্পিউটারে টাইপ করা।

• হাতের তালুর গোড়ার অংশে চাপ দিয়ে কিংবা টেবিলের প্রান্তে বা কোণায় হাত রেখে কাজ করা।

• হিসাব-নিকাশ কাজের জন্য নিউমেরিক প্যাড কী অথবা সংখ্যাবিশিষ্ট পৃথক কী-বোর্ড (Detachable 10-key) ব্যবহার না করা। 

৫. পিঠ, কোমর এবং পা (Back, Hip & Legs) ব্যথা

• কম্পিউটারের কাজের উপযোগী চেয়ার ব্যবহার না করা।

• অধিক উচ্চতাসম্পন্ন কিংবা পিছনে সাপোর্ট নেই, এমন চেয়ার ব্যবহার করা।

• বিরতিহীনভাবে দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করা।

• কী-বোর্ডের অবস্থান অধিক দূরে হওয়া কিংবা অধিক নিচে বা উচ্চতায় স্থাপন করা।

• ছোট হেলানোবিশিষ্ট চেয়ার (low backrest chair) কিংবা পিছনের দিকে বেশি হেলানো চেয়ার ব্যবহার করা।

• টেলিফোন সেট বা ব্যবহার্য অন্যান্য যন্ত্রপাতি দূরবর্তী স্থানে রাখা। 

• সিস্টেম ইউনিট ডেস্কের নিচে রাখার ফলে আরামভাবে পা রাখতে না পারা।

• সিডি-রম, ডিস্ক ড্রাইভ, পেন ড্রাইভ প্রভৃতির সুইচ বা পোর্ট হাতের নাগালে না থাকা ।

৬. হাঁটু, গোড়ালি এবং হাতের পাতা (Knees, Feets & Ankles) ব্যথা 

▪️অধিক উচ্চতাসম্পন্ন কিংবা কম উচ্চতাসম্পন্ন চেয়ার ব্যবহার করা।

▪️বেশি নরম বা বেশি উচ্চতার গদি বা ফোমযুক্ত চেয়ার ব্যবহার করা ।

▪️বিরতিহীনভাবে দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করা। সিস্টেম ইউনিট ডেস্কের নিচে রাখার ফলে আরামভাবে পা রাখতে না পারা।

অরগানমিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি পরিহারের একটি পরিকল্পনা নিম্নরুপ-

১. ব্যবহারকারীর চোখের দূরত্ব হতে মনিটরের দূরত্ব 20 ইঞ্চি থেকে 30 ইঞ্চি অর্থাৎ 50 সেন্টিমিটার থেকে 76 সেন্টিমিটার পর্যন্ত হওয়া উচিত। চেয়ারে বসা অবস্থায় হাত সোজাসুজি সামনের দিকে ধরে বৃদ্ধাঙ্গুলি বরাবর দূরত্ব ধরে আনুমানিকভাবে 20 ইঞ্চি পরিমাপ করা যায়।

২. মনিটরের উচ্চতা এমন হওয়া উচিত স্ক্রিনের উপরিভাগ ও ব্যবহারকারীর চোখ একই সমতলে থাকে। স্ক্রিনের মাঝামাঝি অংশে দেখার জন্য চোখ সামান্য নিচের দিকে তাকানো উচিত।

৩. তীব্র বা অসহনীয় আলো পরিহার করার জন্য মনিটরের উজ্জ্বলতা নিয়ন্ত্রণ করা এবং কম্পিউটারের কক্ষের আলো সহনীয় বা কাজের উপযোগী করে ঠিক করে নিতে হবে।

৪. আলোর উজ্জ্বলতা কোনরূপ পরিবর্তন না হলে, মনিটরকে পিছনের দিকে 10° থেকে 20° কাত করা যেতে পারে। এতে মনিটরের উপর থেকে নিচের দিকে দৃষ্টিপাতের সময় মনিটর থেকে ব্যবহারকারীর চোখের দূরত্ব সর্বত্র প্রায় সমান থাকবে। তবে দূরদৃষ্টি ও ক্ষণদৃষ্টি উভয় সুবিধাসম্বলিত চশমা (bifocal) ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে এই পরিমাপ 33° থেকে 45° হওয়া উচিত।

৫. কী-বোর্ডের মাঝামাঝি অংশ কনুই বরাবর উচ্চতায় থাকা উচিত। এতে ব্যবহারকারী স্বাচ্ছন্দ্যে দীর্ঘক্ষণ কাজ করতে পারবে। ৬. কী-বোর্ড পিছনের দিকে 10° হেলানো উচিত যাতে হাতের কব্জি সমান বরাবর থাকে।

৭. অবিরাম কাজের সময় মাঝে মধ্যে ২০ ফুট অধিক দূরত্বের কোন কিছুর দিকে তাকানো উচিত। এতে চোখের উপর চাপ কম পড়বে এবং চোখ খানিকটা বিশ্রাম পাবে।

৮. কাজের সময় মাঝে মধ্যে দাঁড়ানো কিংবা পিঠ ও বাহু টান টান করে নেয়া উচত। এতে কোমর, পিঠ ও শরীরের নিম্নাংশে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হবে এবং দীর্ঘক্ষণ কাজ করার ফলে সৃষ্ট পেশীর টান পড়া বা ব্যথা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

৯. কাজ করা অবস্থায় অধিকাংশ সময় দৃষ্টি যেদিকে থাকে (যেমন স্ক্রীন, উৎস ডকুমেন্ট প্রভৃতি) সেদিকে মাথা দিয়ে সোজা হয়ে বসা উচিত। অন্যথায় ঘাড় ব্যথা বা মাথা ব্যথা হতে পারে।

১০. ব্যবহারকারী যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে ও আরামে কাজ করতে পারে, এমন চেয়ার ব্যবহার করা উচিত। কী- বোর্ডের বরাবর হাত রাখার জন্য হাতাওয়ালা চেয়ার এবং পিছনে প্রয়োজনীয় সাপোর্টযুক্ত চেয়ার ব্যবহার করতে হবে।

১১. দীর্ঘক্ষণ ধরে একই আসনে কাজ করার ফলে পেশীতে অবসাদ বা ক্লান্তি আসতে পারে। এজন্য আসন বিন্যাস সঠিক থাকলেও মাঝে মধ্যে মনিটর, কী-বোর্ড, চেয়ার প্রভৃতি বিন্যাসে কিছুটা পরিবর্তন করতে হবে।

১২. ল্যাপটপ ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন পরিবেশে বিভিন্ন অবস্থায় কাজ করলেও প্রয়োজন অনুযায়ী ও পরিবেশ উপযোগী করে আসন বিন্যাস ঠিক না করে যেনো দীর্ঘ সময় ধরে কাজ না করেন সেদিকটা মাথায় রাখতে হবে।

১৩. আট-দশ ঘণ্টা কাজের মাঝে প্রতি ঘন্টায় ছোট ছোট বিরতি নিতে হবে। সেটা মিনিট দশেকের মতোও হতে পারে।

১৪. কমপক্ষে কয়েক পা হেঁটে শরীরের ভঙ্গি বদল করতে হবে। এ হাঁটার জন্য কম্পিউটারের আশে পাশে যথেষ্ট জায়গা থাকা প্রয়োজন ।

১৫. কাঁধের এবং মেরুদণ্ডের উপরের অংশের পেশিগুলিকে দীর্ঘায়িত এবং শিথিল করতে গুটিকয়েক স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করতে হবে। যেমন- মুষ্টিবদ্ধ দুই হাত মাথার উপর টান টান করা, হাঁটু গেড়ে আধা বসা অবস্থায় জানালার গ্রিল ধরে শরীরটা টানা। ঘাড়টা বার কয়েক ডান, বাম বা উপর নিচ করে নেওয়া।

১৬. হাঁটা চলা না হলেও চেয়ারে বসেই উল্টো হাত করে নিজের দুই কাঁধ জড়িয়ে ধরতে হবে। উঠে দাঁড়িয়ে মাথার পিছনে হাত টান টান করতে হবে। নজর রাখতে হবে বসার ভঙ্গির উপর।

🚻 শ্রেণির কাজ : কম্পিউটার ব্যবহারজনিত কারণে ব্যবহারকারীর বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। নিচে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার তালিকা দেয়া আছে। প্রতিটি সমস্যার বিপরীতে একটি করে কম্পিউটার ব্যবহারজনিত কারণ উল্লেখ করো ।

শারীরিক সমস্যাকম্পিউটার ব্যবহারজনিত কারণ
মাথা ব্যথা 
চোখ ব্যথা 
কোমড় ব্যথা 
কাঁধ ব্যথা 
হাটু ব্যথা 
Content added || updated By

টেবিল-চেয়ারের ধরন, উচ্চতা এবং মনিটরের স্বাস্থ্যসম্মত অবস্থান

স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে কম্পিউটার ব্যবহার করার জন্য ব্যবহারকারীর আসন ব্যবস্থা ও শরীরের বিভিন্ন অংশের অবস্থান যথাযথ নিয়মে হওয়া উচিত। এর জন্য টেবিল, চেয়ার এবং মনিটরের একটি স্ট্যান্ডার্ড মাপ থাকা জরুরি। নিচে টেবিল, চেয়ার এবং মনিটরের স্বাস্থ্যসম্মত অবস্থান নিয়ে আলোচনা করা হলো।

▪️টেবিল

টেবিলের আকার, আকৃতি ও ধরণ বিভিন্ন কর্মীর জন্য ভিন্নতর হলেও একটি আদর্শ টেবিলের সাধারণত যে সকল বৈশিষ্ট্য থাকা উচিত নিম্নে তাদের উল্লেখ করা হলো।

১. টেবিল সাধারণত কম উজ্জ্বল রংয়ের এবং অনাবশ্যক নকশা বিবর্জিত হবে। এটি গাঢ় কালো না হওয়াই বাঞ্ছনীয় কারণ ঐ রং চোখের জন্য পীড়াদায়ক এবং বিশেষ করে কম্পিউটার টাইপিস্টদের জন্য অসুবিধাজনক।

২. কম্পিউটার এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে যাতে টাইপ করতে কোনো অসুবিধা না হয়। তাছাড়া অধিকাংশ টাইপিস্ট হাতের ডান দিকে সংশ্লিষ্ট কাগজ রেখে তা টাইপ করেন। ফলে তার টেবিলের কম্পিউটার মেশিনের ডান দিকে যথেষ্ট খালি জায়গা রাখতে হবে। টেবিলে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ট্রের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে কর্মী তার নিকট আগত কাগজপত্রাদি একটি ট্রেতে এবং তার নিকট হতে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হবে এমন কাগজপত্রাদি অন্য ট্রেতে রাখতে পারে।

৩. টেবিলের উচ্চতা প্রমাণ মানের হবে যাতে একজন স্বাভাবিক আকৃতির কর্মী কাজ করতে অসুবিধার সম্মুখীন না হন। বৃটিশ স্ট্যান্ডার্ড ইন্সটিটিউটের মতানুসারে টাইপিস্টদের জন্য ২৭ হতে ২৮ ইঞ্চি উচ্চতা বিশিষ্ট টেবিলই অধিকতর উপযোগী।

৪. কম্পিউটারের সিপিইউ রাখার জন্য নিচে ডান দিকে আলাদা একটি তাক বা ট্রে তৈরি করতে হবে। যাতে টাইপ করার সময় পা গুছিয়ে রাখতে না হয়।

▪️ চেয়ার

১. চেয়ারের উচ্চতা সংশ্লিষ্ট টেবিলের উচ্চতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। তবে এই ক্ষেত্রে কর্মীর দৈহিক উচ্চতাও বিবেচ্য বিষয়। চেয়ারের আকৃতি ও উচ্চতা সম্পর্কে ব্রিটিশ ষ্ট্যান্ডার্ড ইনষ্টিটিউটের বর্ণনা এই ক্ষেত্রে উল্লেখ করা যেতে পারে।

ক. ভূমি হতে উচ্চতা ১৬.৫” হতে ১৭.৫”

খ. সম্মুখ হতে পিছনের দূরত্ব ১৪.৫" হতে ১৬”

গ. চওড়া ১৬" হতে ১৭”

ঘ. বসার স্থান হতে পিঠ রাখার স্থানের উপর পর্যন্ত ১১” হতে ১১.৫"

ঙ. পিছন রাখার স্থানের প্রস্থ ১৪" হতে ১৫”

চ. আকৃতি-সম্মুখ ভাগ সোজা ও পিছন বৃত্তাকার

২. চেয়ারের পিছন ভাগ কর্মীর পিঠ যথাযথভাবে রাখার জন্য উপযুক্ত হতে হবে। বসা অবস্থায় কর্মীর মেরুদণ্ড যাতে সোজা থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত।

৩. চেয়ার বৃত্তাকারে ঘুরানোর উপযোগী করে প্রস্তুত করা উচিত। এতে যে সকল কর্মীকে কাজের জন্য এদিক ওদিক ঘুরতে হয় তাদের জন্য সুবিধা হয়। অধিকন্তু এটি ক্লান্তি অবসানের জন্য সহায়ক হয়।

৪. বসার জায়গা শক্ত হলে তাতে বেশিক্ষণ কাজ করা অসুবিধাজনক। এই জন্য গদিযুক্ত বা বেতের তৈরি চেয়ার কাঠের সাধারণ চেয়ারের তুলনায় কর্মীর নিকট অধিক পছন্দনীয়।

▪️মনিটর

ব্যবহারকারীর চোখের দূরত্ব হতে মনিটরের দুরত্ব 20 ইঞ্চি থেকে 30 ইঞ্চি অর্থাৎ 50 সেন্টিমিটার থেকে 76 সেন্টিমিটার পর্যন্ত হওয়া উচিত। চেয়ারে বসা অবস্থায় হাত সোজাসুজি সামনের দিকে ধরে বৃদ্ধাঙ্গুলি বরাবর দূরত্ব ধরে আনুমানিকভাবে 20 ইঞ্চি পরিমাপ করা যায়। 

মনিটরের উচ্চতা এমন হওয়া উচিত যেন স্ক্রিনের উপরিভাগ ও ব্যবহারকারীর চোখ একই সমতলে থাকে। স্ক্রিনের মাঝামাঝি অংশে দেখার জন্য চোখ সামান্য নিচের দিকে তাকানো উচিত। তীব্র বা অসহনীয় আলো পরিহার করার জন্য মনিটরের উজ্জ্বলতা নিয়ন্ত্রণ করা এবং কম্পিউটারের কক্ষের আলো সহনীয় বা কাজের উপযোগী করে ঠিক করে নেয়া উচিত।

আলোর উজ্জ্বলতা কোনরূপ পরিবর্তন না হলে মনিটরকে পিছনের দিকে 10° থেকে 20° কাত করা যেতে পারে। এতে মনিটরের উপর থেকে নিচের দিকে দৃষ্টিপাত মনিটর থেকে ব্যবহারকারীর চোখের দূরত্ব সর্বত্র প্রায় সমান থাকবে। তবে দূরদৃষ্টি ও ক্ষীণদৃষ্টি উভয় সুবিধা সম্বলিত চশমা (bifocal) ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে এই পরিমাপ 33 থেকে 45° হওয়া উচিত। স্ক্রীন (এলসিডি প্যানেলকে) এমন অবস্থানে (অ্যাঙ্গেলে) রাখতে হবে যাতে স্বাচ্ছন্দ্যময় হয়।

🚻 ১. একক কাজ : একটি ত্রুটিপূর্ণ চেয়ারে বসে কম্পিউটারে কাজ করলে তোমার কি শারীরিক সমস্যা হতে পারে? 

২. দলগত কাজ : শিক্ষার্থীরা ক্লাসে দুই দলে বিভক্ত হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার পক্ষে-বিপক্ষে একটি বির্তকের আয়োজন করো।

Content added || updated By
Promotion